বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ছয়জনের নিয়োগ আদেশ বাতিল করেছে সরকার। গতকাল সোমবার তাদের নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এই ছয়জন হলেন অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহিনা সোবহান, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ এফ জগলুল আহমেদ, মো. মুনির হোসেন, অধ্যাপক শাহনাজ সরকার ও ড. মিজানুর রহমান। তাদের মধ্যে অধ্যাপক শাহিনা সোবহান সরকারের গঠন করা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি এ পদে এখনও বহাল রয়েছেন।
২ জানুয়ারি এই ছয়জনকে পিএসসির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ৯ জানুয়ারি তাদের শপথের দিন ধার্য করা হয়েছিল। এর আগেই তিনজনের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বলা হয়, তারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী। তাই তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি তোলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। আপত্তি জানান পিএসসির কর্মকর্তারাও। সর্বশেষ গত রোববার বিতর্কিত তিন সদস্যের নিয়োগ বাতিলের জন্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী। নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ছয়জনের নিয়োগের আদেশ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে বাতিল করা হলো।’
শাহনাজ সরকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের অধ্যাপক (গ্রেড-১) ছিলেন। মুনির হোসেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি। মিজানুর রহমান ছিলেন বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক। শাব্বির আহমেদ চৌধুরী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব (পশ্চিম ও আইসিটি) এবং সৈয়দা শাহিনা সোবহান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক।
জানা গেছে, ডা. শাহিনা সোবহানের বাবা জামালপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছিলেন। এ ছাড়া ডা. শাহিনা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ এফ জগলুল আহমেদ সম্পর্কে বলা হয়, তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) ডিজি ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালনকালে ‘আয়নাঘরে’ অনেকেই বন্দি হয়ে নির্যাতনের শিকার হন। ড. মিজানুর রহমান সম্পর্কে বলা হয়, তিনি আওয়ামী লীগের আমলে বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন বিয়াম আওয়ামী লীগপন্থি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এদিকে পিএসসিও শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে চিঠি দেয়।
এই তিনজনের নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীও। ৯ জানুয়ারি দলটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, তিনজনের একজন পতিত স্বৈরাচারের সরাসরি সুবিধাভোগী। আরেকজন আয়নাঘরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগ করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অন্যজন জামায়াত নেতা মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সরকারের সাজানো মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বিচারিক হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন। এসব চিহ্নিত ব্যক্তিকে পিএসসির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ অক্টোবর পিএসসির পূর্ণ কমিশন পদত্যাগ করে। ৯ অক্টোবর সরকার পিএসসিতে প্রথম দফায় চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য নিয়োগ দেয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ অক্টোবর আরও পাঁচজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ৬ নভেম্বর চারজন সদস্য শপথ নেন, একজন শপথ গ্রহণ করেননি। তৃতীয় দফায় ২ জানুয়ারি ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়ার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পক্ষ থেকে তিনজনের নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
নিয়োগ দিয়ে আবার বাতিল করা প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব আবুল হায়াত মো. রফিক গতকাল সমকালকে বলেন, ‘পিএসসিতে সদস্য নিয়োগ হয় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে। নিয়োগের অনুমোদন হওয়ার পর আমরা কেবল ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপন আপলোড করি। কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়, এটি সরকার বলতে পারবে। সরকারের সিদ্ধান্তেই তা বাতিল করা হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/এইচ